ই -স্কুল নয়, ইস্কুল চাই

ই -স্কুল নয়, ইস্কুল চাই

অতিমারি নিঃসন্দেহে সারা বিশ্বের সামাজিক -অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলিকে বিপুল ধাক্কা দিয়েছে।বিশেষতঃ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার বেহাল দশা উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে সার্বিক ভাবে।স্বভাবতই শিক্ষাক্ষেত্রও এর বাইরে থাকেনি।কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে গত ২ বছর ধরে যেভাবে স্কুল, কলেজ ইউনিভার্সিটি বন্ধ করে রেখে একটি প্রজন্মকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তা নজিরবিহীন। গত ২ বছর ধরে আংশিক, পূর্ণ - লকডাউনের নানা চেহারা আমরা দেখেছি। কিন্তু শিক্ষালয়ে সরকারের কয়েক দিনের বিচ্ছিন্ন অপরিকল্পিত পাঠদানের অনিচ্ছুক উদ্যোগ বাদে ক্লাসরুম পঠন-পাঠন যে শিকেয় উঠে গেছে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।অনলাইন শিক্ষার প্রহসন থেকে বাদ পড়ে গেছে প্রান্তিক শিক্ষার্থী সমাজ।এতদিনের অতিমারি পরিস্থিতিতেও সুলভ গণ মাধ্যম গুলিকে শিক্ষার কাজে ব্যবহার করার কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি সরকারের পক্ষ থেকে।বেড়েছে অনলাইন শিক্ষা অ্যাপের ব্যবসা।মোবাইল কেনার অক্ষমতা থেকে শুরু করে নেট রিচার্জের বিপুল খরচ ক্রমাগত দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী সমাজ কে গভীর বৈষম্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে।একদিকে অতিমারি পরিস্থিতিতে আর্থিক অনিশ্চয়তা অন্যদিকে পঠন পাঠন বন্ধ, এই জোড়া আক্রমনের মুখে বেড়েছে ড্রপ আউটের সংখ্যা, মানসিক স্বাস্হ্যহানি, কন্যা শিক্ষার্থীর বিবাহ, শিশু শ্রম, দরিদ্র শিশুর অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার আশংকা এবং অন্যদিকে মোবাইল পোষণের ক্ষমতাধর পরিবারে শিক্ষার্থীর অত্যাধিক নেট নির্ভরতা।ক্লাসরুম শিক্ষার কোন বিকল্প হতে পারে না।অতিমারির অজুহাতে বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপঙ্গু করে রাখা হচ্ছে কার স্বার্থে?পানশালা, শপিংমল খোলা, মেলা থেকে শুরু করে কোন উৎসব পালনই বাদ যাচ্ছে না, অথচ ওমিক্রনের মত একটি ভ্যারিয়েন্ট-শিশুদের ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা যার দ্বারা সবচেয়ে কম-কোন্ দূরদর্শী কল্যান চিন্তায় স্কুল কলেজ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে সমাজবোধের প্রাথমিক পাঠ থেকে তাদের দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? এদিকে অতিমারি কালে উঠে গেছে এ রাজ্যের ২ শতাধিক সরকারী স্কুল। সরকারী শিক্ষাব্যবস্থা যা সাধারণ দরিদ্র প্রান্তিক সুবিধাবঞ্চিত অভিভাবকদের একমাত্র ভরসাস্থল তাকে লাটে তুলে দেওয়ার পিছনে কোন্ অশুভ উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে তা ভাবা দরকার।
সম্মিলিত প্রতিবাদ হোক সমাজের সর্বস্তর থেকে।নিচের দাবীগুলির সাথে সহমত হলে স্বাক্ষর করুন।
- অবিলম্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষাঙ্গন খুলে দিতে হবে।
- সাধারণ মানুষের ভরসা সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা লাটে তুলে বেসরকারিকরণের প্রচেষ্টা বন্ধ হোক।
- শিক্ষার অধিকার সর্বজনীন, শিক্ষাকে মহার্ঘ্য করে সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধিতে অতিমারি অজুহাত মানছি না।
- ই -স্কুল নয়, ইস্কুল চাই।
- রোটেশন মেনে সপ্তাহে অন্তত দুদিন প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীর স্কুলে আসার ব্যবস্থা করা হোক।
- সুলভসাধ্য গণমাধ্যম গুলিকে শিক্ষাপ্রসারে কাজে লাগানোর সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হোক।
- সংক্রমন রুখতে এবং শিক্ষার্থীদের ও খেটে খাওয়া মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে গণ পরিবহন ব্যবস্থায় যানবাহন সংখ্যা বাড়ানো হোক।
- অতিমারি কালে জীবিকা হারানো অভিভাবকদের সন্তানদের জন্য এই শিক্ষাবর্ষের টিউশন ফি মকুব করা হোক।
— টিচার্স ফর ফিউচার ওয়েস্ট বেঙ্গল