কলকাতার রাস্তায় সাইকেল ফিরিয়ে আনুন
কলকাতার রাস্তায় সাইকেল ফিরিয়ে আনুন

দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি ছোট্ট টাউন থেকে ২১ বছর বয়সী মইনা মাঝি পূর্ব কলকাতার ৩ টি বাড়িতে গৃহ সহায়িকা হিসেবে প্রতিদিন কাজ করতে আসেন। সাইকেল তার যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম, যাতায়াত করতে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি রুটের উপর বিধিনিষেধ তৈরি করা হয়েছে, মইনা তার সাইকেলটিকে তার যাত্রাপথের কিছুটা সময় সাশ্রয় করতে ব্যবহার করেন। সাইকেলের মাধ্যমেই প্রতিদিন সকালে আপনার বাড়িতে দুধ, খবরের কাগজ ইত্যাদি পৌঁছে যায়। শহরের বুকে প্রতিদিন সমাজের সর্ব স্তরের প্রায় ২৫ লক্ষ্য মানুষ যাতায়াত করেন সাইকেলর মাধ্যমে। একটি সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী সাইকেল দরিদ্র পরিবারগুলির আয় প্রায় ৩৫% শতাংশ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নিউ দিল্লির একটি নন প্রফিট সংস্থার রিপোর্টে এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, কলকাতার মোট জনসংখ্যার ১১% শতাংশ মানুষ সাইকেলের উপর ভরসা করেন। তাসত্বেও, বিগত কিছু বছর ধরে মূল রাস্তা গুলিতে সাইকেল চালানো বন্ধ করা, সাইকেল চালকদের হয়রান করা, শাস্তি দেওয়া ইত্যাদি চলছে। ২০০৮ সালের ১১ ই আগস্ট, থেকে কলকাতা পুলিশ কলকাতার রাস্তায় সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং এই নিষেধাজ্ঞা গুলি শহরে প্রায় কয়েক হাজার মানুষের প্রতিদিনের যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করেছে যারা পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে একমাত্র সাইকেলের উপর নির্ভরশীল। অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় কলকাতার রাস্তাঘাট গড়ে সব থেকে কম এবং গাড়িগুলি এই জায়গার মাত্র ৬% দখল করে। এছাড়াও, এই শহরে একটি জায়গা থেকে অন্য জায়গার গড় দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের কাছাকাছি যেখানে কিনা খুব সহজেই সাইকেলের মাধ্যমে পৌঁছানো সম্ভব।
স্যুইচঅন ফাউন্ডেশন সমাজে ন্যায়সঙ্গত ও স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষে কাজের প্রতি নিবেদিত এবং আমি নিজেও এই সংস্থার একটি অংশ।
স্যুইচঅন ফাউন্ডেশন একটি স্পিড ম্যাপিং অনুশীলন প্রক্রিয়া চালিয়ে ছিলো যাতে দেখা গেছে গড়ে ১৪ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিবেগ সহ সাইকেল গুলি সহজেই কলকাতার রাস্তায় চলা গাড়ি গুলির সাথে স্পিড মেলাতে সক্ষম। কলকাতার রাস্তায় ট্রাফিক কমানো ছাড়াও সাইকেল শহরের বায়ুদূষণ রোধক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা উচিৎ যা কিনা নীরবে লক্ষ লক্ষ জীবন কেরে নিচ্ছে। ২০১৯ সালের একটি সরকারি গবেষণার থেকে জানা গেছে কলকাতায় বায়ুদূষণ প্রায় ৩০% যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ার থেকে হয় যা কিনা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়।
সাইকেল শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল মানুষের পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয় না অনেক মানুষ অফিসে যাতায়াত করার জন্যও সাইকেল ব্যবহার করেন, যুবকরা এবং শিশুরা এটির মাধ্যমে স্কুল ও টিউশন এ যাতায়াত করে এবং যারা শারীরিক ভাবে সচেতন তারাও সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করেন।
একজন নাগরিক হিসাবে, আমি মনে করি আমার কর্তব্য একটি নিরাপদ এবং টেকসই পরিবহনের পক্ষে কথা বলা এবং সেই কারণেই আমি এই পিটিশন শুরু করি।
নাগরিক হিসাবে, আমাদের সকলের উচিৎ শহরের রাস্তায় সাইকেল চালানো এবং তার জন্য নিরাপদ অবকাঠামো তৈরির জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করা।
কলকাতা ইতিমধ্যেই সবুজ গতিশীলতার ভিত্তিতে সি৪০ শহরের অংশ হাওয়ার দিকে এগিয়ে আছে। সাইকেল কোনো রকম ভাবেই বায়ুদূষণ ঘটায় না এবং বিশেষত বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে পরিবহনের বিকল্প মাধ্যম হিসাবে মানুষের জীবন ও জীবিকা সক্ষম করতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা কতৃপক্ষের কাছে আমাদের কারণ জানতে সংগ্রাম করে চলেছি।
বিশ্ব সাইকেল দিবস উপলক্ষে, আমি নিন্নলিখিত বিষয় গুলি সম্পর্কে পরিবহনমন্ত্রী পুলিশ, পরিবহন দপ্তর, এবং এই সম্পর্কিত অন্যান্য কতৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি -
সাইকেলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুন
সাইকেল চলাচলের জন্য নিরাপদ কাঠামো তৈরির ব্যাবস্থা গ্রহণ করুন
নিরাপদ সাইক্লিং করিডোর সনাক্ত করুন এবং শহরে এনএমটি লেন তৈরি করুন
শহরের রাস্তায় কেবলমাত্র গাড়ী কেন্দ্রিক পরিবহন পরিকল্পনা না রেখে অনুগ্রহ করে সাইকেল উপযোগী পরিকাঠামো তৈরি করুন এবং এই সিস্টেমের অংশ হিসাবে সাইকেল চালকদের উৎসাহিত করুন।
আমি আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি, এই পিটিশনে স্বাক্ষর করে নিরাপদ ভাবে হাঁটার জন্য ও সাইকেল চালানোর জন্য রাস্তা এবং দূষণমুক্ত নির্মল বাতাসের উদ্যোগকে সফল করতে দয়া করে সহায়তা করুন।
ধন্যবাদ,
একতা জাজু
স্যুইচঅন ফাউন্ডেশন