Attention on Manoranjan Bapari
Attention on Manoranjan Bapari

শ্রমজীবী লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। আপনারা ওনাকে চেনেন-জানেন। সারাদেশ ওনাকে চেনে-জানে। ভারতবর্ষের এমন কোনও প্রথমশ্রেনির পত্রপত্রিকা নেই বললে চলে যারা ওনাকে নিয়ে আধ-একপাতা জুড়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। প্রায় সব বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল ওনাকে নিয়ে বহুবার সংবাদ পরিবশেন করেছে। RSTV তো ওনার উপর একটা তথ্যচিত্রও বানিয়েছিল।
উনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনশিক্ষা দপ্তরের অধীন- এক আবাসিক বিদ্যালয়ের ‘কুক’। যেখানে প্রায় ১৫০ জন বাচ্চাদের জন্য দুবেলা রান্নার কাজ করেন। শীত গৃষ্ম বর্ষা ৮ / ১০ ঘন্টা এই কাজ করার পর কিছু লেখালিখিও করেন। ওনার লেখা ১৪/১৫টি বই আছে। যার মধ্যে– ইতিবৃত্তে চণ্ডালজীবন ও বাতাসে বারুদের গন্ধ বই দু'খানা ইতোমধ্যে ইংরাজিতেও অনুবাদ হয়ে গেছে। আর বাতাসে বারুদের গন্ধ আমাজন সংস্থার-ওয়েস্ট ল্যান্ড পুস্তক প্রকাশন দ্বারা নটা ভাষায় অনুবাদের কাজ চলছে। সাহিত্য সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমী, ২৪ ঘন্টা অনন্য সম্মান, গেটওয়ে লিট ফেষ্ট– রাইটার অব দি ইয়ার [মুম্বাই] এবং দি হিন্দু এওয়ার্ড [চেন্নাই] সহ ছোটো মাঝারি আরও অনেক পুরস্কার।
ওনার লেখা কয়েকটি ইউনিভার্সিটি পাঠ্য তালিকায়ও স্থান পেয়েছে। সারা ভারতের বিদ্বান বিদজ্জন আদর আর সম্মান দিয়ে জেএনইউ সহ বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখার জন্য নিয়ে গেছেন। সারা বিশ্বের শ্রেষ্ট তালিকায় থাকা জয়পুর লিট ফেষ্টে বাংলার দলিত সাহিত্যের প্রতিনিধি হিসাবে দুবার আমন্ত্রিত হয়েছেন উনি।
আগে যখন বয়স কম ছিল শরীরে শক্তি সামর্থ বেশি ছিল-তখন পেরে যেতেন। কিন্ত এখন আর লিখতে পারেন না। চারখানা উনুনের সামনে দু'বেলা রান্না করে এসে আর সৃজনশীল কিছু লেখার মত মানসিক বা শারীরিক সক্ষমতা থাকে না। এছাড়া দুই হাঁটুতে ‘নি-রিপ্লেসমেন্ট’ হয়েছে , দু'চোখে হয়েছে ছানির অপারেশান, প্রেশার আছে ,সুগার আছে। যার ফলে রান্নার মতো কঠিন কাজ করা তাঁর শরীরের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তাঁকে দু'বার মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে হাজির করা হয়েছিল। বোর্ডেরও অভিমত আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে রান্নার মত কঠিন কাজ করার মত শারীরিক অবস্থা নেই তাঁর। মাথা ঘুরে পড়ে যেতেও পারেন। দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ইতোমধ্যে একবার পড়েও গিয়েছিলেন। তাঁর শরীরের বাঁদিক পুড়ে গিয়ে প্রায় দশদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল।
তাঁর প্রতি কেন কে জানে ‘মানুষ’ মানবিক নয়। ফলে তারা তাঁকে রান্না ছাড়া অন্য কোন হালকা কাজ কিছুতে দিতে রাজী নয়। যে কারণে মাঝে প্রায় দু'বছর কাজে করতেই যেতে পারেননি উনি। ‘উইদাউট পে’ হয়ে পড়েছিলেন। যেহেতু কর্তৃপক্ষ –ওনাকে কোনও হালকা কাজ দেবেন না - সংসারে অভাব অনটন তীব্র হলে বাধ্য হয়ে আবার ওনাকে সেই রান্নার কাজেই যোগ দিতে হয়। কিন্তু কিছুদিন কাজ করার পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে এখন আর কাজ করতে যেতে পারেন না। তাই জানুয়ারি মাস থেকে সম্পূর্ণ বেতন বন্ধ। ফলে সংসারে নেমে এসেছে তীব্র অনটন।
উনি বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে ছিলেন, অনুগ্রহপুর্বক ওনাকে কোনও হালকা কাজ দেওয়া হোক। তা না হলে কমপক্ষে ওনাকে যা কিছু প্রাপ্য–সেগুলো দিয়ে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হোক। মাত্র এই সামান্য মানবিক দাবী নিয়ে উনি বছরের পর বছর সরকারী অফিসার অধিকারিকের দরজায় দৌড়চ্ছেন। প্রাক্তন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী , বর্তমান উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীসহ প্রায় ডজন খানেক নেতা মন্ত্রীর কাছেও গেছেন।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে ওনার সচিবের কাছে সব কাগজপত্র জমা দিয়ে এসেছেন দু'বার। রাজ্যপালের কাছেও আবেদন পত্র পাঠিয়েছেন। রাজ্যপাল ওনার আবেদনকে গুরুত্ব দিয়ে লিখিত আদেশ দিয়েছেন মানবিক পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য। ওনার হয়ে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি অনুরোধ করেছেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। নমঃশূদ্র বিকাশ পরিষদও ওনার জন্য হালকা একটা কাজের আবেদন জানিয়েছেন। কিন্ত কেন কে জানে ওনার সমস্ত আবেদন নিবেদন ব্যর্থ হয়ে গেছে। সরকারের কোনও কৃপাদৃষ্টির ছিঁটেফোঁটাও ওনার উপর বর্ষিত হয়নি।
উনি বললেন, "তাহলে এখন আমি কী করবো কেউ বলতে পারেন? না খেয়ে তো মরতে চাই না। কী এমন বড় দাবী আমার? কোন নতুন চাকরি চাইছি না, চাইছি সামান্য বদলি। চাইছি সামান্য একটু হালকা কাজ। তা না দিতে চাইলে আইন মোতাবেক-স্বেচ্ছাবসর। এটা কি আমার খুব বড় কিছু চাওয়া?"
সত্যি কি খুব বড় চাওয়া? আমরা কি একটু মানবিক হতে পারি না?